হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভিক্ষুক পুনর্বাসন করার কথা থাকলেও রাজধানীতে ভিক্ষা করে বেড়াচ্ছে হাজারো ভিক্ষুক। এদের পুনর্বাসন যাদের দায়িত্ব তারা বলছেন, ঢাকার ভিক্ষুকরা মৌসুমি ভিক্ষুক। অনেক সময় তারা গ্রাম থেকে এসে ভিক্ষা করে আবার চলে যায়। আবার কেউ কেউ রিকশা চালায়, এর ফাঁকে বিশেষ করে সাপ্তাহিক বন্ধের দিন এবং বিভিন্ন উৎসবে ভিক্ষা করে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯-১০ অর্থবছরে সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান কর্মসূচি শুরু করা হয়। তবে ওই অর্থবছরে কর্মসূচির অনুকূলে কোনো অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি। ২০১০-১১ অর্থবছরে কর্মসূচি খাতে ছয় কোটি ৩২ লাখ টাকা, ২০১১-১২ অর্থবছরে সাত কোটি টাকা এবং ২০১২-১৩ অর্থবছরে আরো ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়।
বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের প্রেক্ষিতে পাইলটভিত্তিতে ঢাকা মহানগরে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠী সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য জরিপের কাজও হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু ওই সময়ে ঢাকা মহানগরে প্রকাশ্য রাজপথে ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করার বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনারের উদ্দেশে হাইকোর্টের নির্দেশ থাকায় ভিক্ষুক জরিপ কাজে কোনো আইনগত বাধা হবে কিনা সে বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের মতামতও নেওয়া হয়।
পরে ১০ এনজিওর মাধ্যমে মহানগরীর ১০টি জোন থেকে এক হাজার জন করে নিয়ে মোট দশ হাজার ভিক্ষুকের জরিপ সম্পন্ন হয়। জরিপে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে ১০ হাজার ভিক্ষুকের ডাটাবেইজ তৈরি করা হয়েছে। গণমাধ্যমে কিছু প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি ওই ১০ হাজার ভিক্ষুকের মধ্যে এক হাজার জনকে ময়মনসিংহ জেলায়, ৫০০ জনকে বরিশাল জেলায় এবং ৫০০ জনকে জামালপুর জেলায় পুনর্বাসন করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত শুধু ময়মনসিংহে ৩৭ জনসহ অল্পসংখ্যক ভিক্ষুককে পুনর্বাসন করা হয়েছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে রাজধানীতে নিয়মিতই ভিক্ষুক দেখা গেলেও মাজসেবা অধিদপ্তর ভিক্ষুকের এ উপস্থিতি মানতে নারাজ। রাজধানীতে যে হাজারো ভিক্ষুক দেখা যায় তাদের অধিদপ্তর ভিক্ষুকের স্বীকৃতি না দিয়ে কাগজকলমে মৌসুমি ভিক্ষুক বলতে চায়। এ প্রসঙ্গে সমাজসেবা অধিদপ্তরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, সারা ঢাকা শহরে যারা এখন ভিক্ষাবৃত্তির সাথে জড়িত তারা সবাই সিজনাল, এরা টানা পাঁচ দিন রিকশা চালায় আর দুইদিন ভিক্ষা করে।
বিশেষ করে রমজান মাস আর শুক্রবার যারা হাত পাতে ভিক্ষার জন্য, তারা কেউ ঢাকা শহরের নয়। তারা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ঢাকা শহরে এসে ভাসমান হিসেবে আশ্রয় নেয়। অন্যদিকে অধিদপ্তরের এমন দাবি নাকচ করেছে ভিক্ষুকদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অপরাজেয় বাংলাদেশ। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদা বানু বলেন, ঢাকা শহরের যে জায়গাগুলোতে ভিক্ষুক নেই বলে সরকার ঘোষণা দিয়েছে, সেসব জায়গায়ও দেখা যায় সাইনবোর্ডের নিচে পুলিশের সামনে ভিক্ষুকরা ভিক্ষা করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিভিন্ন তথ্যমতে, ঢাকা শহরে প্রায় ১৫ হাজার ভিক্ষুক ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে জড়িত। আসলে ভিক্ষুকের সংখ্যা কতো হবে এমন প্রশ্নের জবাবে ওয়াহিদা বানু বলেন, সঠিক সংখ্যা এ মুহূর্তে বলা যাবে না। তবে ২০০৯ সালের একটি জরিপ রিপোর্ট অনুযায়ী তখন রাজধানীতে দশ হাজার ভিক্ষুক ছিল। এখন নিশ্চয়ই এ সংখ্যা বেড়েছে।